শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৮ পূর্বাহ্ন
রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং (হবিগঞ্জ): শারদীয় দুর্গোৎসবের আর বেশি দিন বাকি নেই। কৈলাশ থেকে মর্ত্যে আসবেন দেবী দুর্গা। দেশজুড়ে তাই চলছে দেবী বন্দনার প্রস্তুতি। এরই ধারাবাহিকতায় বানিয়াচংয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতিও এখন শেষপর্যায়ে রয়েছে। প্রতিমা তৈরিতে খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। পাশাপাশি চলছে মন্ডপ সাজানোর কাজ।
আগামী ৪টা অক্টোবর শুক্রবার শুভ মহালয়ার মাধ্যমে শুরু হয়ে যাবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। বরাবরের মতো এবারও সপ্তমী,অষ্টমী ও নবমী পূজার সন্ধ্যায় থাকবে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আর দশমী তিথিতে ঘোড়ায় চেপেই বিদায় নেবেন দেবী দুর্গা। এবার বানিয়াচং উপজেলায় মোট ১১৭ টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। যার মধ্যে সার্বজনীন পূজামন্ডপ রয়েছে ১১৫ টি আর পারিবারিক পূজামন্ডপ রয়েছে ২টি।
দেবী দুর্গার শেষ তুলির শেষ টান আর ঢাকের বাদ্য শুরু হলেই উৎসবে মেঠে উঠবে হিন্দু সস্প্রদায়। আকাশের ছেঁড়া মেঘের ভেলা, কাঁশফুল, ভোরবেলার শিউলি ফুলের গন্ধ এসব কিছুর কারণ একটাই দুর্গতিনাশিনী দেবী মা দুর্গার আগমন। বাঙালির জীবনে দুঃখের যেমন শেষ নেই, শাশ্বত আনন্দের উপলক্ষেরও কমতি নাই। শারদ-উৎসব বাঙালির ঐতিহ্য ও পরম্পরা বহন করে চলেছে। কালো মেঘে আকাশজুড়ে তবু ও যথানিয়মে কার্তিক মাস এসেছে। পদ্মা ও শিউলির লাবণ্য ছড়িয়েছে এদিক ওদিকে শুরু হবে ঢাকের বাদ্য। প্রতিবারের মতো সঙ্গী করে এবারও দুর্গা দেবী যথারীতি আসবেন। আর এই দেবীকে বরণ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।
এদিকে, সবকটি পূজামন্ডপে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রণালয় জিআর প্রকল্পের ৫০০ কেজি করে মোট ৫৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্ধ দেয়ার তালিকা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্লাবন পাল। তিনি জানান, বরাদ্ধকৃত চাল আগামী রবিবার নিজনিজ পূজামন্ডপের সভাপতির কাছে হস্তান্তর করা হবে।
উপজেলা সদরের রায়েরপাড়ার রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম, কালীবাড়ি, বুড়া শিববাড়ি ও কয়েকটি মন্ডপ ঘুরে দেখা গেছে পুরোদমে ব্যস্ত রয়েছেন মৃৎশিল্পীরা। তুলির শেষ টান দিচ্ছেন দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক ও গণেশের গায়ে। আর পুরো বিষয়টি আরও দৃষ্টিনন্দন করতে মৃৎশিল্পীরা মুল প্রতিমার পাশাপাশি তৈরি করেছেন পুরানের নানা চরিত্র। অন্যদিকে পূজারিরা তাদের মনোবাসনা পূরণের প্রার্থনা করবেন তাদের দেবী,মা দুর্গার কাছে। এজন্য হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে চলছে পূজার প্রস্তুতি।
এ প্রসঙ্গে মৃৎশিল্পী দুলাল পাল বলেন, প্রতিমা তৈরির কাজ শেষে দিকে। এখন রঙ এর আঁচড়ে প্রতিটি প্রতিমাকে আকর্ষণীয় করে তোলার কাজ চলছে। এদিকে দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভিন্ন স্থানে পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে আগেভাগেই।
বানিয়াচং পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাবু কৃষ্ণ দেব জানান, পূজার সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। নিñিদ্র নিরাপত্তার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বৈঠক করা হয়েছে। যে কোনো নাশকতা এড়াতে সর্বদা সচেষ্ট থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদ মোবারক জানান, আসন্ন দুর্গাপূজাকে ঘিরে ব্যাপক আকারে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলার সব পূজা মন্ডপগুলোতে পুলিশী নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। পূজা শুরুর দিন থেকে পুলিশের পাশাপাশি আনসার ও সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন করা হবে। যে কোন বিশৃঙ্খলা এড়াতে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। আশা করছি গত বছরের মতো এবারও বানিয়াচং উপজেলায় শান্তিপুর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপিত হবে।